বন্ধুত্বের পরিচয়
এক সময় একটা ময়ূর এবং একটা কচ্ছপ বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল। ময়ূরটি নদীর ধারে একটা গাছে বাস করত। আর কচ্ছপটা ঐ নদীতেই থাকত। প্রতিদিন ময়ূরটি জলপানের পর নদীর ধারে পেখম তুলে নাচত। কচ্ছপ তা দেখে মুগ্ধ হত। কিন্তু একদিন এক শিকারী ময়ূরটিকে ধরে ফেলল। এরপর শিকারী সেটিকে বাজারে নিয়ে যেতে উদ্যত হল বিক্রির জন্য। কিন্তু ময়ূরটি কিছুটা সময় ভিক্ষা করল তার বন্ধুকে বিদায় জানাবার জন্য। শিকারী নির্দয় হলেও ময়ূরটিকে তার বন্ধুর কাছে যেতে দিল। ময়ূরটি জানত যে এটাই হয়তো কচ্ছপের সাথে তার শেষ সাক্ষাৎ হবে। তাই ময়ুরের বুক কান্নায় ফেটে যাচ্ছিল।

শিকারী উত্তর দিল- তুমি আমাকে কোন দামী উপহার দিলে ময়ূরটিকে অবশ্যই ছেড়ে দেব। একথা শোনামাত্র কচ্ছপটি নদীতে ঝাঁপ দিল। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সুন্দর একটা মুক্তা নিয়ে উঠে এলো। এরপর সে মুক্তাটি শিকারীর হাতে দিল। শিকারী মুক্তাটি দেখে এতটাই বিস্মিত হল যে সে ভাষা হারিয়ে ফেলল। সাথে সাথে মুক্তাটি নিয়ে সে ময়ূরটিকে ছেড়ে দিল।
কিছুদিন পর শিকারী আবার ফিরে এলো সেখানে। তারপর কচ্ছপটিকে বলল- যে সে যে দাম পাবে ভেবেছিল তার অর্ধেকও পায়নি। তাই তার ঐ রকম আরেকটা মুক্তা চাই।
কচ্ছপটিকে বলল, ঐ রকম আরেকটা মুক্তা না এনে দিলে ময়ূরটিকে আবার ধরে নিয়ে যাবে। এই রকম যে একটা কিছু হবে কচ্ছপটি তা আন্দাজ করেছিল। শিকারী আসার আগেই তাই ময়ূরকে অনেক দূরে সুরক্ষিত যায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিল।
কচ্ছপ শিকারীকে বলল- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ঠিক ঐ রকমই একটা মুক্তা চাইছতো? তা ওই মুক্তাটা আমার হাতে দাও। যাতে ওটা দেখে আমি ঠিক ঐ রকম আর একটা মুক্তা আনতে পারি।
প্রথমে শিকারী রাজী হল না। কিন্তু কচ্ছপ অনেক করে বুঝানোর পর শিকারী রাজী হল। তখন কচ্ছপ মুক্তাটি নিয়ে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বলল- আমি এতটা বোকা নই যে একটা মুক্তা নিয়ে দুটা মুক্তা দেব। তখন শিকারী হুংকার ছাড়ল- ঠিক আছে কচ্ছপ এবার আমি তোমার বন্ধুকে ধরব। আর এবার ধরলে তার আর কোন নিস্তার নেই।
তখন কচ্ছপ মুচকি হেসে বলল- খুঁজে পেলে তো! একথা বলে সে ডুব মেরে অনেক দূরে গিয়ে ভাসল। তারপর ময়ূরটি যেখানে ছিল সেখানে চলে গেল। আর শিকারী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসতে থাকল।